💧 চোখের পানি পড়া রোগের কারণ ও চিকিৎসা
ভূমিকা
চোখের পানি পড়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। একে ডাক্তারি ভাষায় 'ল্যাক্রিমেশন' বা 'এপিফোরা' (Epiphora) বলা হয়। সাধারণত এটি চোখে অস্বস্তি সৃষ্টি করে এবং দৃষ্টি ঝাপসা করে দেয়। এর সঠিক কারণ চিহ্নিত করে চিকিৎসা করা জরুরি।
🔬 চোখের পানি পড়ার প্রধান কারণসমূহ
চোখের পানি পড়ার সমস্যা মূলত দু'টি কারণে ঘটে: হয় চোখে অতিরিক্ত অশ্রু তৈরি হচ্ছে, না হয় সেই অশ্রু ঠিকমতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না।
অতিরিক্ত অশ্রু উৎপাদনের কারণ:
- শুষ্ক চোখ (Dry Eyes): চোখ যখন পর্যাপ্ত আর্দ্রতা পায় না, তখন এটি ক্ষতিপূরণ হিসেবে অতিরিক্ত জলীয় অশ্রু তৈরি করে। এটিই অন্যতম প্রধান কারণ।
- চোখের অ্যালার্জি: ধুলো, পরাগ, ধোঁয়া বা কসমেটিকসের কারণে অ্যালার্জি হলে চোখ চুলকায় এবং প্রচুর পানি পড়ে।
- বিদেশি বস্তু বা আঘাত: চোখে কোনো কণা বা ময়লা ঢুকলে, অথবা চোখে আঘাত লাগলে সুরক্ষা হিসেবে বেশি পানি ঝরে।
- সংক্রমণ: কনজাংটিভাইটিস (চোখ ওঠা) বা ব্লেফারাইটিস (চোখের পাতার প্রদাহ) এর কারণে চোখে জ্বালা ও পানি পড়ে।
- স্ক্রিন ক্লান্তি: দীর্ঘ সময় কম্পিউটার বা মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখ শুকিয়ে গিয়ে পানি পড়তে পারে।
অশ্রু নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণ:
- অশ্রু নালী বন্ধ (Blocked Tear Duct): অশ্রু নিষ্কাশনের নালী কোনো কারণে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেলে চোখ থেকে অশ্রু বাইরে গড়িয়ে পড়ে। এটি শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
- বয়সজনিত কারণ: বয়স বাড়লে চোখের পাতার স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়, ফলে অশ্রু নালী মুখ থেকে অশ্রু সরাসরি চোখে চলে যায়।
💊 চোখের পানি পড়ার চিকিৎসা
চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যার মূল কারণের ওপর। চক্ষু বিশেষজ্ঞ সঠিক কারণ নির্ণয় করে উপযুক্ত চিকিৎসা দিয়ে থাকেন:
১. অ্যালার্জি বা জ্বালাপোড়ার জন্য:
- অ্যান্টিহিস্টামিন ড্রপ: অ্যালার্জিজনিত কারণে পানি পড়লে ডাক্তার অ্যান্টিহিস্টামিনযুক্ত আই ড্রপ দিতে পারেন।
- লুব্রিকেটিং ড্রপস: শুষ্ক চোখের কারণে পানি পড়লে কৃত্রিম অশ্রু বা লুব্রিকেটিং আই ড্রপ ব্যবহার করতে বলা হয়।
২. নালী বন্ধের জন্য:
- মাসাজ: নবজাতকদের ক্ষেত্রে অনেক সময় নালীতে মাসাজ করার মাধ্যমে তা খুলে যায়।
- নালী পরিষ্কার (Probing): যদি নালী বন্ধ থাকে, তবে ডাক্তার একটি সরু তার বা প্রোব ব্যবহার করে নালীটি পরিষ্কার করে দেন।
- সার্জারি (DCR): প্রাপ্তবয়স্কদের বা গুরুতর ক্ষেত্রে, ড্যাক্রিওসিস্টোরহাইনোস্টোমি (Dacryocystorhinostomy - DCR) নামক সার্জারির মাধ্যমে একটি নতুন নিষ্কাশন পথ তৈরি করা হতে পারে।
৩. অন্যান্য চিকিৎসা:
- সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ বা মলম ব্যবহার করা হয়।
- স্ক্রিনজনিত ক্লান্তি কমাতে '২০-২০-২০ নিয়ম' মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।
⚠️ কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন
যদি পানি পড়ার সাথে সাথে নিচের কোনো একটি লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন:
- চোখে তীব্র ব্যথা বা লালচে ভাব।
- দৃষ্টিশক্তি হঠাৎ কমে যাওয়া।
- চোখের পাতার চারপাশে ফোলা বা ত্বকের সংক্রমণ।
- নাকের গোড়ার দিকে স্পর্শ করলে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
- দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাটি স্থায়ী হলে বা বাড়তে থাকলে।
Leave Your Comment